মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে কাকে শাস্তি দিতে চায় বিটিআরসি?

1670

বকেয়া পরিশোধ না করায় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির ব্যান্ডউইথ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। গ্রামীণফোনের ৩০ ও রবির ১৫ ভাগ ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দিতে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সংস্থাটি এ নির্দেশনা দেয়। একইসঙ্গে এই নির্দেশনা দ্রুত কার্যকরের কথাও বলে। এরইমধ্যে নির্দেশনার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পাওনা আদায়ের কৌশল হিসেবে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ কমিয়ে কাকে শাস্তি দিতে চায় বিটিআরসি?

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। বেশিরভাগেরই অভিযোগ, বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকরাই সমস্যায় পড়বেন। বিটিআরসি, গ্রামীণফোন কিংবা রবির কোনও সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) জাকির হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্যই এটা করা হয়েছে। এতে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা হবে। গ্রাহকদের এই সাময়িক অসুবিধার জন্য বিটিআরসি তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে। কমিশনের আশা, গ্রাহকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে গ্রামীণফোন ও রবি দ্রুত তাদের বকেয়া পরিশোধ করবে।’

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিল মাসে ১২ হাজার ৫৭৯ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা বকেয়া দাবি করে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন এবং ৮৬৭ দশমিক ২৩ কোটির জন্য রবিকে নোটিশ পাঠায় বিটিআরসি। টাকা পরিশোধের জন্য অপারেটর দুটিকে দুই সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়। বিটিআরসি থেকে তখন বলা হয়, গ্রামীণফোন ও রবির সর্বশেষ অডিটের পরে এই ডিমান্ড লেটার পাঠানো হয়েছে।

বিটিআরসির হিসাব মতে, মে মাস পর্যন্ত গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৮১ হাজার এবং রবির গ্রাহক ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার। এই বিশাল সংখ্যক গ্রাহকের অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রায় ১৪৪ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) এবং রবির ১২৫ জিবিপিএসে (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সীমিত রাখতে বলা হয়েছে।

টেলিকম শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও অনেকভাবেই অপারেটর দু’টিকে শাস্তি দেওয়া যেতো। ইন্টারনেট সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত। এর ওপর গ্রাহকদের একটা নির্ভরশীলতাও চলে এসেছে। ফলে এই সিদ্ধান্তে সরাসরি গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা উল্লেখ করেন, ১০০ মেগা ইন্টারনেট আগে যেখানে ব্যবহার করতো ৩ ঘণ্টায়, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে তা ব্যবহার করতে সময় লাগবে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। একটা কাজের জন্য ব্যবহারকারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।

জানা গেছে, দেশের ৪ মোবাইল ফোন অপারেটর প্রায় ৩৫০ থেকে ৪৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে। এরমধ্যে সবেচেয়ে বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে গ্রামীণফোন ও রবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে বিটিআরসির ২২৭তম কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, অপারেটর দুটি বকেয়া পরিশোধ না করলে কমিশন আট ধরনের অপারেশনাল ব্যবস্থা নিতে পারবে। এরমধ্যে বিটিআরসি থেকে দুই অপারেটরের পক্ষে অনাপত্তি জারি বন্ধ করে দেওয়া, এমএনপি পোর্ট ইন বন্ধ বা সীমিত করা, নতুন গ্রাহক নেওয়া বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ প্রান্ত থেকে ব্যান্ডউইথ বন্ধ বা সীমিত করা, আইজিডব্লিউ প্রান্ত থেকে ইনকামিং বা আউটগোয়িং কল বন্ধ বা সীমিতকরণ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) মাধ্যমে বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া, নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা এসএমএসের মাধ্যমে সারাদেশ বা নির্দিষ্ট এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার মতো অপারেশনাল ব্যবস্থা রয়েছে। এরমধ্যে বিটিআরসি ব্যান্ডউইথ সীমিত করার পদক্ষেপ নিলো।

রবির চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি প্রধান শাহেদ আলম বলেন, ‘বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মোবাইল গ্রাহকরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হবেন। প্রশ্নবিদ্ধ নিরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে মোবাইল গ্রাহকদের জন্য এই ধরনের ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত দিয়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বিটিআরসি । আইনের ওপর শ্রদ্ধাশীল থেকে সালিশের মাধ্যমে নিরীক্ষার বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য রবি বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছিল। আমাদের চিঠির জবাব দেওয়ার পরিবর্তে গ্রাহকদের জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো। আমরা আমাদের এই সীমিত ব্যান্ডউইথ দিয়ে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’ 

সুত্র – বাংলা ট্রিবিউনে