৫ গ্রাম প্লাস্টিক আপনি হজম করছেন প্রতি সপ্তাহে!

1648

প্রতি সপ্তাহে একজন মানুষকে হজম করতে হচ্ছে ৫ গ্রাম পরিমাণ প্লাস্টিক! সম্প্রতি পরিবেশবিষয়ক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সারা বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে প্লাস্টিকজনিত দূষণ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি পরিবেশগত দাতব্য সংস্থা গবেষণাটি তত্ত্বাবধান করেছে। আজ বুধবার গবেষণায় পাওয়া তথ্যাবলি প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা গেছে, পৃথিবীজুড়ে প্লাস্টিক সংক্রান্ত দূষণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি সপ্তাহে মাথাপিছু ৫ গ্রাম পরিমাণ প্লাস্টিক হজম করছে মানুষ। আর প্লাস্টিকের এই পরিমাণ একটি ক্রেডিট কার্ডের সমান।

এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল। বলা হচ্ছে, মানুষ প্রাথমিকভাবে পানীয় জলের উৎস বা আধেয় হিসেবে প্লাস্টিক হজম করছে। এর বাইরে প্লাস্টিকের আরেকটি উৎস হচ্ছে শেলফিশ নামের একটি মাছ। এই মাছটি সাধারণত পুরোটাই খাওয়া হয়। ফলে এর পেটে থাকা প্লাস্টিকও মানুষ খেয়ে ফেলছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের খাবার ও বিভিন্ন পানীয়তে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সাল থেকে পুরো বিশ্বে যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে, তা বিগত বছরগুলোর মোট পরিমাণের সমান। এর এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সরাসরি প্রকৃতির সংস্পর্শে আসছে। প্লাস্টিক দূষণের তীব্রতা অঞ্চলভেদে কম-বেশি হয়। তবে এখনো পর্যন্ত এমন কোনো স্থান এই পৃথিবীতে নেই, যেখানে প্লাস্টিক দূষণ দেখা যায়নি।

গবেষকেরা বলছেন, মাথাপিছু প্রতিটি মানুষ শুধু পানি থেকেই সপ্তাহে ১ হাজার ৭৬৯টি প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে কলে সরবরাহ করা পানির ৯৪ শতাংশেই থাকে প্লাস্টিক ফাইবার। অর্থাৎ প্রতি লিটার পানিতে থাকে গড়ে ৯ দশমিক ৬টি প্লাস্টিক ফাইবার। তবে ইউরোপের পানিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দূষণ কম। সেখানে প্রতি লিটারে পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৮টি প্লাস্টিক ফাইবার।

প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা মানুষের দেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের অধ্যাপক রিচার্ড ল্যামপিট সিএনএনকে বলেন, ‘মানুষের দেহে প্লাস্টিকের প্রভাব কতটা ক্ষতিকর, তা পরিমাপে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন আছে। যদি দীর্ঘমেয়াদে প্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশ করতে থাকে, তবে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক আকার নিতে পারে। তবে এই বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।’

বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৩৩০ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে। প্লাস্টিকের বৈশ্বিক উৎপাদন ২০৫০ সালের মধ্যে বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।